প্রযুক্তি এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতাই ব্যবসায় এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র

14-05-2022

যেকোনো ব্যবসা পরিচালনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হওয়া। কার্যকরভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির মোকাবিলা করা এবং কঠিন সময়ে টিকে থাকার জন্য নতুন নতুন আইডিয়াকে কাজে লাগানোর সক্ষমতার উপর একটি ব্যবসার সাফল্য নির্ভর করে৷ বিশ্বব্যাপী মহামারী এবং বিধিনিষেধের কারণে বিগত ৩ বছর ধরে পৃথিবীতে এক অনিশ্চয়তার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রথমদিকে যখন সারা পৃথিবীতে কোভিড ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন সব ধরণের ব্যবসা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলো সেই অনিশ্চয়তার সাথে মানিয়ে নেয় এবং কঠিন সময়ে টিকে থাকার জন্য উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। এই সময়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবং ব্যবসার উন্নতির জন্য অনেকেই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছেন। ডিজিটাল যুগে বাস করার কারণে, প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক পরিবর্তন আনার ফলে বেশিরভাগ ব্যবসা টিকে আছে।

মহামারীর সময় গ্রাহকের কেনাকাটার আচরণে পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনকে মাথায় রেখে ইগনিটো নামের এক অস্ট্রেলিয়ান স্টার্টআপ একটি ডিজিটাল এনরিচমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। প্ল্যাটফর্মটি তার রিটেইল অপারেশন এবং গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতারা তাদের ভোক্তাদের কেনাকাটার আচরণ বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে খুচরা বিক্রেতারা শপিংয়ের পিক টাইম বের করতে পারেন এবং রিয়েল-টাইমে বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী তথ্য পান। এসব তথ্য পরবর্তীতে তারা তাদের ব্যবসার উন্নতির জন্য ব্যবহার করেন।

প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা কী করে কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সহায়তা করে তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশের বাজারের সমস্ত স্থানীয় কোম্পানি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সময় বড় বড় সংস্থাগুলিকে প্রযুক্তির সহায়তা নিতে এবং কঠিন সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে দেখা গেছে। অনেকে তাদের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য নিজস্ব ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালু করেছিল। কোকা-কোলা বাংলাদেশ এরকমই একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের খুচরা বিক্রেতাদের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ ভিত্তিক অর্ডারিং ব্যবস্থা চালু করে যাতে গ্রাহকরা তাদের প্রিয় পানীয়গুলি মিস না করেন। এই ব্যবস্থায়, খুচরা বিক্রেতারা সরাসরি পরিবেশকদের কাছে তাদের অর্ডার দিতে পারতেন এবং সেই অনুযায়ী তাদের কাছে পণ্য পৌঁছে যেত।

মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম শহরে কাজীর দেউড়ি এলাকার একজন খুচরা বিক্রেতা। তিনি মনে করেন, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এই ব্যবস্থার কারণে কঠিন সময়েও ব্যবসায়িক যোগাযোগ রক্ষা সহজ হয়েছিল। "লকডাউন চলাকালীন, নিরাপত্তা প্রোটোকল বজায় রেখে নিয়মিত পরিদর্শন করা আমাদের পরিবেশকদের জন্য কঠিন ছিল এবং আমরা প্রায়ই সময়মতো পণ্য রিস্টক করা নিয়ে চিন্তায় থাকতাম। হোয়াটসঅ্যাপ অর্ডারিং ব্যবস্থার কারণে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছিল। এতে একদিকে যেমন সবসময় পণ্যের পর্যাপ্ত স্টক রাখা সম্ভব হয়েছিল, অপরদিকে পণ্যের ডেলিভারির জন্যও আমাদের নির্দিষ্ট দিনের অপেক্ষা করতে হতো না। এছাড়া কোভিডের জন্য নির্দিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখাও সম্ভব হয়েছিল।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় একটি নামকরা ক্যাফে ম্যাড মিলের মালিক মিশু মনে করেন, হোয়াটসঅ্যাপের এই ব্যবস্থা ব্যবসায় পরিবর্তন এনেছে। কোকা-কোলা বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ রিটেলার সলিউশন বাস্তবায়নের কারণে কুমিল্লা সিটিতে বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন এই ব্যবস্থার কারণে আগের তুলনায় ৩৬% বিক্রি বেড়েছে।

কোকা-কোলা কোম্পানি হোয়াটসঅ্যাপ রিটেলার সলিউশন শুধুমাত্র বাংলাদেশের বাজারেই চালু করেনি। প্রকৃতপক্ষে, এই পদক্ষেপ নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশের বাজারগুলোতেও বেশ সফল হয়েছে। তুলনামূলকভাবে, বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে। তাতে এই বিষয়টা বেশ স্পষ্ট যে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে এখানকার মানুষ অনেক বেশি উদার।

মহামারীর প্রথম দিকে বাংলাদেশের মানুষ প্রযুক্তির ওপর অনেক বেশি নির্ভর করেছে। এখন অনলাইনে জামাকাপড়, খাবার, মুদিসামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং অন্যান্য জিনিস অর্ডার করা একটি সাধারন ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এই তালিকায় পানীয় যোগ করা ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের দিকে আরও একটি পদক্ষেপ মাত্র।

আমরা বলতে পারি যে, এই প্রযুক্তিটি সমস্ত ব্যবসার জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। চলমান মহামারী এবং অনিশ্চয়তার কথা বিবেচনা করে, ব্যবসায়ীদের আরও ডিজিটালি এবং প্রযুক্তিগতভাবে চিন্তা করার এখনই উপযুক্ত সময়। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।