কোকা-কোলা কীভাবে গ্রামীণ নারীদের দারিদ্রতা দূর করছে
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর ও পিপড়াডাঙ্গা এলাকায় তপোতি রানী মজুমদার, উন্নাতি মন্ডল ও মনিকা বারৈ-এর মতো নারীরা এখন পুরোদস্তুর ব্যবসয়ীতে পরিণত হয়েছেন।
সাদ্দাম হোসেন
29-09-2022
বাংলাদেশে নারীরা, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীরা রক্ষণশীল পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধের কারণে শিক্ষা, উদ্যোগে সীমিত অংশগ্রহণের ফলে দেশের লক্ষ লক্ষ টাকার জিডিপি হারায়।
বৈষম্য, বাল্যবিবাহ, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, অর্থাভাব এবং অপুষ্টিসহ নানান রূপে এই চ্যালেঞ্জগুলি দেখা যায়।
এই প্রতিবন্ধকতাগুলোর কারণে নারীদের জন্য শুধুমাত্র একটিমাত্র পথই খোলা থাকে এবং তা হল বাড়িতে মা এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে থাকা।
কিন্তু একটি কর্মসূচী এই নারীদের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে এবং দারিদ্র্য থেকে তাদের বের করে আনতে সাহায্য করছে।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর ও পিপড়াডাঙ্গা এলাকায় তপোতি রানী মজুমদার, উন্নতি মন্ডল ও মনিকা বারৈ-এর মতো নারীরা এখন পুরোদস্তুর ব্যবসয়ীতে পরিণত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউনাইটেড পারপাস এবং কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত প্রকল্প উইমেন বিজনেস সেন্টার (ডব্লিউবিসি)-এর মাধ্যমে তারা তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন।
সন্তোষপুর উইমেন বিজনেস সেন্টারের একজন ৩৮ বছর বয়সী উদ্যোক্তা তোপোতি রানী মজুমদার একটি মুদি দোকানের পাশাপাশি নিরাপদ সবজি এবং মাছ চাষ করছেন।
আরও চারজন সদস্যকে সাথে নিয়ে ২০১৭ সালে তিনি ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে মুদি দোকান শুরু করেছিলেন এবং বর্তমানে প্রতি মাসে সেখান থেকে তার আয় ১৪,০০০-১৬,০০০ টাকা।
কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইউনাইটেড পারপাস থেকে একটি ফ্রিজার পাওয়ার পর তার মুদি দোকানে তিনি বাচ্চাদের খাবার, সবজি, দুধ, ডিম, পানি এবং কোমল পানীয় বিক্রি করেন।
তিনি বলছিলেন যে স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে এবং মানুষের মন্দ কথা শুনতে হয়েছে কিন্তু তার ব্যবসা যখন দাঁড়িয়ে গেল তখন "তারা আমার সাফল্য দেখে এবং আমার গ্রাহক হওয়ার পরে তাদের মত পরিবর্তন করে।"
ডব্লিউবিসি হল একটি পারস্পরিক সহযোগিতা-ভিত্তিক ব্যবসায়িক মডেল, যেখানে একজন উদ্যোক্তা অন্যান্য উদ্যোক্তাদের সাথে মিলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে ব্যবসায় অবদান রাখেন।
ইউনাইটেড পারপাসের সহযোগিতায় কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন ব্যবসা পরিচালনার জন্য ফ্রিজার এবং ল্যাপটপের মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে। তারা প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন বলে জানান উদ্যোক্তারা।
চিতলমারীর পিপড়াডাঙ্গা এলাকার উদ্যোক্তা উন্নতি মন্ডলের সাফল্যের গল্পও প্রায় একই রকম।
এমনকি আর্টসে স্নাতকের ডিগ্রি (বিএ) অর্জন করার পরেও উন্নতি মন্ডল অর্থের জন্য তার স্বামীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন। তারপর তিনি কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ইউনাইটেড পারপাস থেকে বিজনেস মার্কেটিং এবং কমিউনিকেশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
২০১৭ সালে অন্য চারজন মহিলা উদ্যোক্তার সাথে তিনি তার নিজস্ব মুদি দোকান দেন এবং ফিশ ফিড, সার, চারা, ওষুধ, সবজি চাষ, কাপড় এবং পিএইচ পরীক্ষা করার কিট বিক্রি শুরু করেন।
বর্তমানে তিনি মাসে ১৫,০০০-১৮,০০০ টাকা আয় করেন।
তপোতী রানী মজুমদার ও উন্নতি মন্ডলের মতো পিপড়াডাঙ্গার মনিকা বারৈ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ননী রানী রায়, কাকলী ব্যাপারী এবং শারমিন আক্তার ইউনাইটেড পারপাস থেকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেয়ে নিজেদের ব্যবসার শুরু করেছেন এবং অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করেছেন।
যে বিষয়টি সবচেয়ে অবাক করেছে তা হল সকল উদ্যোক্তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব।
আমাদের সফরের শেষ দিনে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে "নারীর সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে উইমেন বিজনেস সেন্টারের ভূমিকা" শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা কর্মশালা ছিল, যেখানে খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকে ডব্লিউবিসির উদ্যোক্তাসহ প্রায় ৫০ জন অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোপালগঞ্জ জেলার ডিসি শাহিদা সুলতানা এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও মোঃ আল মামুন।
দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ১৯৮৪ সালে। ২০১০ সালে ফাইভ বাই টুয়েন্টি নামে একটি বৈশ্বিক উদ্যোগের কথা ঘোষণা করে কোকা-কোলা কোম্পানি। যার উদ্দেশ্য হল ২০২০ সালের মধ্যে ৫ মিলিয়ন নারী উদ্যোক্তার অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন।