ঢাকা দক্ষিণের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে এসআর এশিয়াকে অর্থ দিচ্ছে কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন

বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে বাংলাদেশের শহর এলাকায় ১৫ বছরে মাথাপিছু তিন গুণ বেড়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। ২০০৫ সালে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ৩ কেজি ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে সে পরিমাণ ৩ গুণ বেড়ে ৯ কেজি হয়েছে। ট্রিবিউন ডেস্ক

01-06-2022

আসন্ন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি এশিয়া (এসআর এশিয়া) বাংলাদেশের নতুন একটি প্রকল্পে তহবিল সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন। এর উদ্দেশ্য হলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি জোরদার করা।

এসআর এশিয়ার ‘ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অব প্লাস্টিক অ্যাসর্টমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রিবিউশন টুওয়ার্ডস গ্রিন ইকোনমি’ (ইম্প্যাক্ট-জিই) নামক প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করেছে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন।

এই পার্টনারশিপের মূল উদ্দেশ্য হলো বায়ু, পানি ও ভূমি দূষণের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি একটি কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তোলা। এছাড়া, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য পরিবেশবান্ধব চাকরি বা গ্রিন জব এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ব্যবস্থা করে তাদের জীবনমান উন্নত করাও এর লক্ষ্য।

বর্জ্য সমস্যা প্রতিরোধ ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করবে ইমপ্যাক্ট-জিই। এই প্রকল্পের প্রাথমিক সময়সীমা ১২ মাস। এর মাধ্যমে প্রথম ৬ মাসের পাইলট সময়সীমার মধ্যে ১৮০০ টন পিইটি সংগ্রহ ও রিসাইকেল করা হবে এবং তা ১৩ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করবে। এছাড়াও ৩০০ বর্জ্য সংগ্রাহক ইমপ্যাক্ট জিই-এর জন্য এসআর এশিয়ার সাথে নিবন্ধন করেছেন। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আরও বাড়ানোও তাদের পরিকল্পনার অংশ।

এসআর এশিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমাইয়া রশিদ বলেন: "চমৎকার কিছু নীতিমালা থাকার পরেও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যায় ভুগছে। এর সমাধানের জন্য সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের উদ্যোগই জরুরি।"

"বিশেষত, বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার জন্য বেসরকারি খাতকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক মান ও নীতিমালা অনুযায়ী থ্রিআর (3R) বাস্তবায়ন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জীবনের মান উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসায়িক মডেলের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন — এসকল বিষয়ে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। এর ফলে, বেসরকারি খাতের ব্যবসার মাধ্যমে জাতি উপকৃত হবে। দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।"

দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সাদিয়া মাসবার্গ বলেন: " বাংলাদেশের বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা একটি অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং এটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত নয়। প্রোগ্রামটির মাধ্যমে আমরা এই অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করতে চাই। পাশাপাশি, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জীবনে স্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করাও এর লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রকল্প বর্জ্য হ্রাস করতে সাহায্য করবে এবং সমাজ ও পরিবেশের উন্নতি করবে।"

এর আগে, ব্র্যাককে ‘বন্ধন’ ক্যাম্পেইনে সহায়তা করেছে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন। যার লক্ষ্য ছিল ঢাকা শহরের ১৩টি নিম্ন আয়ের এলাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ জীবন ও জীবিকার মডেল গড়ে তোলা। এই প্রকল্প থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। "বন্ধন"কল্পটির প্রধান উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজধানীর পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আটটি ওয়াশ ব্লক স্থাপন করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের "টুয়ার্ডস এ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ" নামক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের শহর এলাকায় মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ২০০৫ সালে ছিল ৩ কেজি কিন্তু ২০২০ সালে সে পরিমাণ তিন গুণ বেড়ে ৯ কেজি হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একটি সার্কুলার ইকোনমি সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন ভ্যালু চেইন, পরিবেশবান্ধব দক্ষতা বা গ্রিন স্কিলস, কর্মসংস্থান ও উদ্ভাবনী পণ্য তৈরিতে সাহায্য করবে। তাই এই সার্কুলার ইকোনমি সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই প্রয়োজনীয়।

দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ও এসআর এশিয়ার বাস্তবায়নে এই প্রকল্প সেই লক্ষ্য পূরণের পথে এক ধাপ। এর ফলে বেসরকারি খাতের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এমন উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।